Sunday, February 08, 2009

দৌড়ের ওপর দিয়ে

সমরেশ যখন দৌড় লিখল, কেউ লিখল প্রজাপতি । কেউ বসেছিল গোড়ালি অবদি গ‌ঙ্গার জালে পা ডুবিয়ে। শুকনো ফুল যেমন ভাসে, আর আমাদের ভাড়া করা মেঘগুলোর ভেতর ঐশ্বর্য রাই বিনোদিনীর সাজে ব্যগ্র করে তুলল বকুল গন্ধে। ওহে বকুল প্রিয়া, সত্য সাহা মিউজিক করছেন, ছিটকে ছিটকে বেরোচ্ছে ম্যাজেন্টা বিভা। টিটাগড়ে কোন এক কারখানার বন্ধ সাইরেনের মনিটরে বসে ছোট্ট চড়াই ডাকে, টগরফুল, ও টগরফুল।


একে একে তারা সব ফুল হয়ে যায়। দুধ সাদা জিনসে ঋতুপর্ণা বনিদের ঐক্যতানের কনসার্ট টায় কেমন জানি বিভোর হয়ে থাকল, রাত কিছু কম কালো, গড়িয়াহাটার পুল উঁচু। সুতরাং টালমাটাল। কারবার( কার যখন বারে রূপান্তরিত হয়) যখন বন্ধ, বোতলেরা গুনিজন লেকের ধারে প্রপাত।একটা গান মাথায় যেমন ঘোরে তেমন ঘুরছিল কিন্তু ঝামেলাটা হল, স্কুল ড্রসের মেয়েটি সাদা- কমলার কম্বিনেশনে থেকেও শিউলি হল না কেন ! এই সময় রনে -বনে -জলে- জঙ্গলে ঐশ্বর্য রাই-এর কথা স্মরণ করতে হ্য়। উদ্ধার কর ।আমায় উদ্ধার কর ।


ঐশ্বর্য এল বটে। ওলিম্পিক্সের ৫ খানা গোল্লার মত চোখ করে বলল, সিস্টেম ফেলিওর ।সকাল থেকে ফোন আসছে, এখনও কাজে বেরোইনি। মাথার মধ্যে টিপটিপ বৃষ্টি। বন্ধ কলের নিচে ক্যাটকেটে লাল আর জীর্ণ সবুজ বালতির নাছোড়বান্দা পড়ে থাকা।ঘরের শোলার হলুদ পাখি দুলতে দুলতে ফিকে হয়ে যাচ্ছে, বিপদ, ভীষণ বিপদ, ডেস্কটপ থেকে হাওয়া ঐশ্বর্য রাই তার সাথে আপাত জরুরী কিছু ফাইল পত্তর।

যখন আমি ছুটিতে থাকি না

উৎপল যেই বললেন, সব থেমে গেলে উৎকীর্ণ খরচাপাতির কথা, মেঝে ভিজে, আমি অভ্যাসদোষে কোন বই নিয়ে টয়লেটে, শরীরটা ভাল নেই কেবল, তবু এই কিছু ছোটবেলার মার্বেল কাঁচের জারের বাইরে ঘুরেই যাচ্ছিল।

মৃত্যুর কথা ভাবি না যে তা নয়, ক্রমশ ঠান্ডা হয়ে যায় চুলের অগ্রভাগ, মেঝে জুড়ে ছড়িয়ে পরছেন শ্রীযুক্ত কেশব চন্দ্র নাগ। নীল একপ্রকার মাছি কোন হ্রদের থেকে উঠে এসে ঢুকে যায় ভীমচন্দ্র নাগের সন্দেশের দোকানে, যা কোন মতেই সত্যজিৎবাবুর বাপ-দাদার সম্পত্তি নয়। তবু এই যে ঢুকে গেল, সেও ছুটতে লাগল হাইপো থ্যালামাস বরাবর, ওফ।

যখন আমি ছুটি না, তখন ঝরার সময়। পাতা-বরফ-উড়ে যাওয়া ইয়ো ইয়ো ও ফেনা, ঝরে পড়ে কোন শতাব্দী প্রাচীণ তরু বৃক্ষতলে যেখানে যাত্রার মত শুয়ে আছেন ভীষ্ম সাজে জঁ লুক গোদার। এই দ্যাখো, চারপাশ ঠান্ডা হতে হতে আমাকে করে তুলছে অত্যন্ত সাদা ধার্মিক সদাসয় বক। কলসির ভেতর নোনা ইলিশের মত গজল গাইয়েদের ভরে যেদিন মর্জিনা ঢেলে দিল গারম-ফুটন্ত তেল! আমি ভাবি, কাজ, মেশিন একপেশে কারাগারে বসে, কি ভাবে লেখা হবে তোমাদের দেখা-হাঁটা-চলা।

আমি যখন ছুটিতে থাকি , কেবল ছুটিতেই থাকি। সৌর জগতের কিছুমাত্র বাইরে ও ভিতরে আমার সোনার ও রূপার কাঠিরা ইলেক্ট্রন- ইলেক্ট্রন খেলা খেলিতে খেলিতে ক্লান্ত হইয়া যায়, আমি নিরুপায়, শবাসনে পড়ে থাকি রাত্রি প্রথম প্রহরের মত, সুতরাং ভাবনা-চিন্তা করি। আমি ছুটিতেই থাকি, ছুটিতেই থাকি যখন আমি আসলেই ছুটিতে থাকি।

Tuesday, February 19, 2008

বিজ্ঞাপনের নবকুমার


বিজ্ঞাপন খেতে ভাল ম্যাপের মত ডি শার্প বালা গান নয় ডাকোয়ার্ড-লুইস নয় লারে লাপ্পা, এক্সকিউজ মি লেট মি ফাইন্ড


পাথ
----
আলু ছিল পটল ছিল কে কার ভেতরে, কে বাইরে জানি নাচোখের বেলায় ইন্টুগুলুগুলু আনারসে নেই স্ট্রাকচার আসে না টেরচা গ্রাফ থিয়োরী


ফিল্ডিং
-----
ফাটা মাটি, বালি আলু, বেলেমাছ আর কাঁসাই জুড়ে বালি ঘটি ঘুরে বেড়ায় শাড়ি শুকায়, লম্বা লম্বা


ম্যাপিং
-----
শব্দটা মনে পরল, মিসিসিপি কচুপাতা মুড়ে রাখা ছিল তেলে ভিজে চুপচুপে, কিছুটা ভাপে

নৌকার লন্ঠন দপদপ করছিলই হাওয়া কমলে কপালকুন্ডলা গামছায় মোড়া ছোলাগুলো নদীর জলে একবার ঢুবিয়ে তুলে নিল কাল সেগুলো থেকে নরম নখের মত কল বেরোবে, সকাল অবধি থাকতে হবে খিদে পেয়েছে খুব
আফটার এফেক্টে ফেলে একটু মেঘ ঘন করে দেওয়া হল একটু নয়েজ


রহস্য গল্প
--------
সবানের ফেনার মত নদীর জল চিকচিক করতেই থাকে দূরে আবছা একটা বাঘ সাঁতরে যায় বেলপাতার মত কিছু একটা মুখে নবকুমার হাতেও পারে, নাও হতে পারে জিম করবেট পাকা ডাকাতের মত দুই হাতে ভর দিয়ে নৌকোর ওপর লাফিয়ে ওঠে ঝাঁকুনিতে ঘুম ভেঙে যায় কাপালকুন্ডলার তার শীত করে, সাহেবকে কম্বলের মত টেনে নেয় ভিজে গামছার ভেতরে নদীর ভ্যাপসা হাওয়ায় ছোলার নাবালক কলগুলি শীৎকার করে ওঠে

Friday, September 08, 2006

দূর গাঁয়ের দুর্গা


এখন আমি রাতের দিকে যাচ্ছি ৷ রোজ যাই বা যাই না, সেটা বড় কথা নয়, আজ আমি ঘড়িকে ফেলে এগিয়ে যাচ্ছি ৷ নাগরদোলা ঘুরছে, ঘসঘসে ক্যাসেটে বেহাগে সানাই ৷ সত্যি মাইরি জিন্দেগীতে কেউ যেন সানাই বাজায় নি বিসমিল্লাবাবু ছাড়া ৷ বেলুনওয়ালার লাঠিতে ঝুলছে পোঁ করার সব সানাই ৷ মেলা বসেছে চারপাশে ৷ আমার প্রত্যেক রাত এমনই পশরা সাজায় ৷

একটা আরশোলা দেখে মনে হয় ঘিয়ে ভাজা, এ বুলবুল কুকুরের মত নয় ৷ প্রতিসরাঙ্ক নির্ণয় না করেই তাকে রামগোপাল ভার্মার নতুন আবিস্কার বলে মেনে নিই ৷ লাক্স-প্যারাসুট ও কুর্কুরে, কোনো নতুন শোয়ের জন্য আমরা তৈরী কি না, তা জানার জন্য টকব্যাকে যাবতীয় খিস্তি শোনা যায় ৷ আলো কমে যায় পুরোপুরি, জিমি রেডি, অগ্নিমিত্রার ক-অক্ষর সহকারী আরশোলার পেছনের জিপ পুরো খুলে দিয়ে যায় ৷ ইস্টার্ট ৷

এখনো কাশ ফোটে ৷ পদ্ম ফোটে ৷ লেখালিখি হয় বর্ষাকাল থেকে ৷ আমিও তিনদিন ছুটি নিয়ে লিখি ৷ এই ভাবেই পুজো আসে ৷ তারপর রাতে রাত মেশে, আমি দিন রাত খেটে চাড্ডি পয়সা জোগাড়ের চেস্টা করি ৷ মিটে গেলে কিছু পয়সা পাই আর প্রচুর খিস্তি, এই সব ড্যাসের কাজ করছিস ৷ আমি কিন্তু রাতগুলো কাটাই জব্বর ৷ গ্রামেগঞ্জে থাকলে লোকাল মাল জুটে যায় ৷ হেবি খাতির করে লোকজন ৷ কার মেয়ে গান শিখছে, কে ভাল ক্যারম খেলে, কে একবার শুনে কোন এক সামাজিক যাত্রাপালার ঝালাপালা সংলাপ মুখস্ত বলতে পারে তার নমুনা দেয়, অনেক রাত অবধি ৷ দারুন সব রগড় ৷ আমি ছইয়া শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়ি ৷ টাটা সুমোয় করে লম্বা লম্বা পাড়ি দিই, মাঝে সাঝে সরকারি বাসের সাথে ধাক্কা মারি ৷

পুজোর আগে, দু-একটা ইস্পেশাল শো হয় ৷ তাতে কাজ জুটলে বোনাস ৷ কাজ না জুটলেও থাকতে হয়, নতুন ট্যালেন্ট খুঁজতে, রামগোপালের মত উর্মিলা পাই না বটে উর্মিমালা নিয়েই শান্ত থাকি ৷ পুজোর আগে টেলিভিশনে উপস্থাপিকা কম পড়ে যায় ৷ আমাদের সেটা পুশ করার সময় ৷ কেউ চোখে পড়ল ?ডেট আছে ? অন্য চ্যানেলে কিছু করছে না তো ? আমার একটু একটু তখন পুজোর দিনগুলো মনে পড়ে, আমাদের মত ক্যালানের সামনে, কার মেয়ে নাচ জানে, কার বৌ গান জানে, তারা নাচে-গায়-ডায়লগ বলে, নেচে যেতেই থাকে, গান সব জুড়ে জুড়ে গায় অন্তাক্ষরীর মত, পুরো যাত্রাপালায় সকলের ডায়লগ মুখস্ত বলে, বলে যেতেই থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা ঘুমিয়ে পড়ি ৷